শফিয়েল আলম সুমন ময়মনসিংহ
বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, দখলে রাখা, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন পার্কে অবস্থিত মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ২৩টি বন্যপ্রাণী জব্দ করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। জনমনে প্রশ্ন এক টাই ১২ বছর পর কি বন বিভাগের টনক নড়েছে ?
এ সময় মিনি চিড়িয়াখানায় অবৈধভাবে রাখা একটি অজগর সাপ, দুটি ময়ুর, পাঁচটি হরিণ, দুটি মদনটাক পাখি, একটি কুমির, দুটি ভাল্লুক, একটি সজারু, পাঁচটি বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি জব্দ করা হয়। পরে চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২ বছর ধরে চিড়িয়াখানাটি তৎকালীন মেয়র ইকরামুল হক টিটুর অনুসারীরা পরিচালনা করে আসছিল। মূলত এই চিড়িয়াখানাটি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন থেকে নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়েছিলেন ৪নং ওয়ার্ড কমিশনার মাহবুবুর রহমান দুলালের শ্যালক সেলিম।পরে তার কাছ থেকে ৪নং ওয়ার্ড কমিশনার মাহবুবুর রহমান দুলাল এটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তখন থেকে এই চিড়িয়াখানাতে বিভিন্ন প্রাণীকে খাঁচায় বন্দি করে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট এবং বিভিন্ন রাইড স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসার প্রসার ঘটানো হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তারা গা ঢাকা দেয় এবং চিড়িয়াখানাটির দায়িত্ব নেন ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুন। তবে শুরু থেকেই চিড়িয়াখানটির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং কর্মীদের দুর্ব্যবহার নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে পারতো না।সম্প্রতি চিড়িয়াখানার ভেতরে থাকা একটি ভালুকের পায়ে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিনি চিড়িয়াখানার পরিচালক মিজানুর রহমান মামুন। তিনি বলেন, মানুষের চিত্ত বিনোদনের কথা চিন্তা করে নামমাত্র দর্শণার্থী বিনিময়মূল্যে চিড়িয়াখানায় তারা প্রাণীদের প্রতি সর্বোচ্চ যত্ন নেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি ভালুক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ হলে তার পায়ে পচন ধরে এবং ঘা হয়ে যায়। তবে তারা একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসকের মাধ্যমে সেটি সাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, আইন অমান্য করে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল।
জয়নুল পার্কে নাম প্রকাশে অনেকে জানান যে আইনে এ কাজটি করা হলো সেটা তো আগেই ছিল ১২ বছর পর কেন এর কারণ বন বিভাগের ভিতর রয়েছে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা জানান, বন্যপ্রাণী সংগ্রহ,
দখলে রাখা, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এখান থেকে ২৩টি বন্যপ্রাণী
জব্দ করা হয়। জব্দকৃত প্রাণীগুলোকে গাজীপুর সাফারী পার্কে অবমুক্ত করা হবে এবং
কিছু প্রাণীকে ১৫ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে স্বাভাবিক বণ্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে।
0 Comments