চরকা রিপোর্ট ঃ
সন্তান জন্মানোর পর প্রসূতিদের গর্ভফুল বা অমরা (প্ল্যাসেন্টা) মাটিতে পুঁতে না রেখে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্মচারীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রসূতিদের গর্ভফুল সংগ্রহ করত একটি চক্র । প্রতিটি গর্ভফুল মাত্র ৫০ টাকায় আয়াদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে অন্য একটি গ্রুপের কাছে বিক্রি করতেন।সেই চক্র টি চীনের কালোবাজারে চড়া দামে বিক্রি করতো এমন চক্রের ৫ সদস্য কে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ ।
ডিবি পুলিশ জানায় সন্তান জন্মানোর পর প্রসূতিদের গর্ভফুল পাচার করছিল একটি চক্র। ময়মনসিংহের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা এসব গর্ভফুল ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। গত শুক্রবার রাতে চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার বিকেলে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) শুক্রবার রাতে খবর পায়, পিকআপ ভ্যানে মানবদেহের অঙ্গপতঙ্গের অংশবিশেষ হিমায়িত প্যাকেটজাত করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করে ঢাকার ধামরাইয়ে নেওয়া হচ্ছে। নগরের বলাশপুর এলাকায় সন্দেহজনক একটি পিকআপ আটকে সেখানে তল্লাশি চালানো হয়। পিকআপটি থেকে পলিথিনে মোড়ানো ৩৫০টি গর্ভফুলসদৃশ বস্তু, ০৩ টি ক্যাটগার্ডসহ সুই ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ এবং পিকআপের চালক মো. রুহুল আমিনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রুহুল আমিনের দেওয়া তথ্যে ধামরাই ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন মো. নরুল ইসলাম (৫৪), মো. মুমিনুর রহমান (৩২), দেওয়ান মো. অমিত (৩১) ও মো. খুরশিদ আলম (২৫)।
এর মধ্যে নজরুল ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার ধলিরকান্দা গ্রামে, রুহুল আমিনের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাদুরতলা গ্রামে, মুমিনুর রহমানের বাড়ি ধামরাইয়ে, দেওয়ান মো. অমিতের বাদী ধামরাইয়ের কালিয়াগার এলাকায় এবং খুরশিদ আলমের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পাহাড় পাইবজান গ্রামে।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্মচারীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রসূতিদের গর্ভফুল সংগ্রহ করেন। প্রতিটি গর্ভফুল মাত্র ৫০ টাকায় আয়াদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হতো। এরপর সেগুলো হিমায়িত করার পর পিকআপ ভ্যানের চালক রুহুল আমিনের মাধ্যমে ঢাকার ধামরাই এলাকার মুমিনুর রহমানের কাছে সরবরাহ করতেন। সরবরাহ করা গর্ভফুল আসামি মুমিনুর রহমান ও দেওয়ান মো. অমিত চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে ক্রয়-বিক্রয় করতেন। এগুলো তাঁরা ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে অন্য একটি গ্রুপের কাছে বিক্রি করতেন।
এ ঘটনায় শনিবার ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। উদ্ধার হওয়া গর্ভফুলসদৃশ আলামতগুলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই যুবরাজ দাস বলেন, চক্রটির পাঁচ সদস্যকে ৭ দিন করে রিমান্ড চেয়ে শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হয়। রোববার আদালতে রিমান্ড শুনানি হবে। তিনি আরও বলেন, চক্রটি এটি দ্বিতীয় চালান সরবরাহ করছিল বলে তথ্য দিয়েছে। প্রসূতি নারীরা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এ গর্ভফুলগুলো ধ্বংস করার কথা। কিন্তু সেগুলো চক্রের সদস্যরা খুব সামান্য টাকায় আয়াদের মাধ্যমে কিনে নিচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এগুলো চীনের কালোবাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়। তবে রিমান্ডে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আরও বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।
ডিবি আরো জানায় বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে বিধি মোতাবেক প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এবং ডাঃ তানভিন সুলতানা, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ময়মনসিংহদ্বয়ের মতামতের ভিত্তিতে উদ্ধারকৃত মহিলাদের গর্ভফুল সাদৃশ্য আলামতগুলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয় এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
0 Comments