প্রতি বছর রমজান মাস আসলে জিমিদের বাড়ির সকলেই রোজা রাখে।
জিমির বড়, ভাই জিহাদ, জিমির আব্বু, আম্মু। জিহাদের বয়স দশ-এগারো বছর।
কিন্তু নামাজ রোজার প্রতি তার বেশ ভক্তি।
সূর্য অস্ত
গিয়ে কেবল সন্ধ্যা নেমেছে। জিহাদ মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাইরে এসে
সকলের সাথে রোজার চাঁদ দেখে আনন্দে টগবগ করতে করতে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি এলো
খুশির সংবাদটি তার আম্মুকে বলবে বলে।আর মনের খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে রোজার
কবিতা পাঠ করতে লাগলো....
এলো রমজান এলো রমজান
রোজা রাখিবার মাস,
আদেশ পালন করিতে হইবে
আমরা যাহার দাস,
ঐ চাঁদ উঠেছে চাঁদ উঠেছে
আকাশ পানে দেখো...
আত্মশুদ্ধির জন্য এবার সব
ফরজ রোজা রাখো।
আল্লার হুকুম আল-কুরআনে
সব রাখো যদি রোজা,
তবে, মনটা সবার পবিত্র হবে
কমবে পাপের বোঝা।
আল্লাহ আছে সব সত্য জেনে
রাখো যদি রোজা,
শয়তানের পথটি ছেড়ে দেখো
আল্লার পথটি সোজা।
সেসময়
ওদের আম্মু রেবেকা সুলতানা মাগরিবের নামাজ পড়ে কেবল ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির
আঙ্গিনায় এসে দাঁড়িয়েছে রোজার চাঁদ দেখার জন্য। জিহাদ হাস্যউজ্জ্বল মুখে
এসে বললো... আম্মু....আম্মু...রোজার চাঁদ উঠেছে দেখেছো? রেবেকা বললো...না,
এখনো দেখিনি। চাঁদ দেখা গেছে! কই চাঁদ? জিহাদ ডান হাতের শাহাদাৎ আঙ্গুল
সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশের দিকে তুলে রোজার চাঁদ দেখিয়ে বললো...আম্মু ঐ...
দ্যাখো চাঁদ...। রেবেকা দেখার চেষ্টা করে চাঁদ দেখতে পেয়ে বললো তাইতো
আলহামদুলিল্লাহ।পাশ থেকে জিমি বললো আম্মু কই রোজার চাঁদ? রেবেকা তখন হাত
ইশারা করে জিমিকেও চাঁদ দেখালো। জিমি চাঁদ দেখে বললো...আম্মু রোজার চাঁদ কি
সুন্দর তাইনা? রেবেকা বললো..
হুম, খুব সুন্দর। তারপর বললো.. চাঁদ, সূর্য, তারা,
সব
কিছুই যে, বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহু তায়ালার নুরের আলোরি
বহিঃপ্রকাশ মা জিমি। জিহাদ বললো..এজন্য চাঁদ নুরের মতো জ্বলজ্বল করছে
আম্মু? রেবেকা বললো...হুম ঠিক বলেছ বাবা জিহাদ।
তারপর রেবেকা বললো...আজ রাতেই তাহলে রোজার জন্য সেহরি করতে হবে আমাদের।
জিমি
বললো....আম্মু সেহরি কি? রেবেকা তখন বললো..শেষ রাতে সোবহে সাদিকের সময়
রোজা থাকার নিয়তে খাদ্য পানাহার করাকে সেহরি বলে মা জিমি। জিমি বললো..ও
আচ্ছা, তাহলে আমি
-ও সেহরি করে রোজা রাখবো আম্মু। জিহাদ শুনে বললো...ওরে বাবা...আমার ছোট্ট বোনটিও
রোজা রাখবে। জানো আপু...রোজা রাখলে কিছু
খাওয়া যায়না সারাদিন উপোস থাকতে হয়। সে-
সময় ওদের আব্বু জীবনও নামাজ শেষে বাড়ি
এসেছে। জিহাদের শেষের কথা শুনে বললো.শুধু
উপোস নয় বাবা জিহাদ। মহান আল্লার সন্তুষ্টি করার জন্য রোজা রাখা বা- সিয়াম সাধনা অনেক
কঠিন কাজ। সিয়াম অর্থই সংযম, বিরত থাকা।
সব খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে উপবাসের
মাধ্যমে প্রভুর ইবাদত বন্দেগি করতে হয়। জিহাদ
বললো...আব্বু আমরা তো প্রভুর নামাজ পড়ছি।
জীবন বললো...শুধু নামাজ নয়।
আমাদের প্রতিটা ভালো কাজ আমাদের জন্য ইবাদত স্বরূপ। জিহাদ বললো...কি রকম আব্বু?
জীবন বললো...যেমন আল্লার তসবিহ তাহলীল করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।
অর্থাৎ
নফল নামাজ পড়া, জিকির করা, কুরআন তেলাওয়াত করা। অভাবি গরীব দুঃখীর
দানখয়রাত করা। নিজেদের সম্পদ থেকে আল্লার বিধান অনুযায়ী ফিতরা দেওয়া। এসব
আর কি।
কেননা...ধনীদের গচ্ছিত সম্পদে গরীব দুঃখীদের
হক রয়েছে। জিমি বললো..আব্বু বড় হয়ে আমি
ও গরীবদেরকে দান করবো। শুনে জীবন খুশি হয়ে বললো হুম, মা জিমি। আল্লাহ যেনো তোমার দেওয়ার তৌফিক দান করেন।
জিমি বললো...আচ্ছা আব্বু রোজা কেনো রাখতে হয়? আর রোজা রাখলে কি পাবো আমরা?
জীবন বললো...মা জিমি, রোজা রাখা আল্লার হুকুম। আমাদের প্রভু মহান আল্লাহু পাক পবিত্র
কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে
বলেছেন....হে
মোমিন বিশ্বাসী গণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল
তোমাদের পূর্ববর্তী বংশধরদের উপর। আর বললে না...রোজা রাখলে কি পাবো?
রোজা
রাখলে মহান আল্লাহু পাক খুব খুশি হউন। তিনি রোজার উছিলায় ইফতার মুহুর্তে
কোনো বান্দা জীবনের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইলে। তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে
দেন। তখন বেবেকা বললো...আরো আছে মা জিমি। রোজা রাখলে
আত্মা পরিশুদ্ধ হয় পবিত্র হয় পাপ থেকে। জিহাদ বললো..মহান আল্লাহ খুশি হয়ে তাহলে আমাদের জান্নাত বাসী করবেন তাইনা আম্মু?
রেবেকা বললো..হুম আরো আছে বাবা জিহাদ।
হাদীসের কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহু পাক রোজ হাশরের দিন নিজের নুরানি হাতে রোজাদার বান্দারের পুরস্কার দিবেন সুবহানাল্লাহ।
জিমি
বললো.আচ্ছা আম্মু ইফতার কি? রেবেকা বললো সারাদিন পর সন্ধ্যায় রোজা রাখার
সময় পূর্ণ হলে কোনো খাদ্য পানীয় খাওয়াকে ইফতার বলে মা জিমি। তোমার
ভাইয়া,তোমার আব্বু কাল দেখো ইফতার করতে যাবে সন্ধ্যার সময় মসজিদে। জিমি
বললো..তাহলে আমিও যাবো আম্মু ইফতার করতে ভাইয়া আর আব্বুর সাথে। জীবন বললো
আচ্ছা ঠিক আছে মা জিমি আমরা যখন কাল মসজিদে যাবো।তুমিও আমাদের সাথে ইফতার
করতে যেও কেমন। জিমি হাসিমুখে ঘাড় নেড়ে বললো হুম ঠিক আছে আব্বু। ঐরাতে
জিমি সেহরি করলো ঘুম থেকে উঠে ওর আব্বু আম্মু আর ভাইয়া জিহাদের সাথে। তারপর
দিন জিমি মসজিদে গেলো ওর ভাইয়া আর আব্বুর সাথে মসজিদে ইফতার করতে।
ইফতারিতে জিমি
খেজুর, শসা, আঙ্গুর ফল, কলা চিড়ে, দই,
এসব দেখে তো মহাখুশি। চার বছরের ছোট্ট মেয়ে জিমি সারাদিন না খেয়ে রোজা
রাখতে না পারলেও। সে প্রতি রাতে সুবহে সাদিকের সময় তার আম্মু, আব্বু, আর
ভাইয়ার সাথে উঠে খুব পুলকিত মনে সেহরি করে। আর সন্ধ্যার সময় ইফতার করতে যায়
মসজিদে। সে তার মা- বাবার শিক্ষায় এতোটুকু ছোট্ট বয়সে এখন থেকেই রোজা
রাখার অভাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছে সুবহানাল্লাহ। যা- দেখে জিমির মা -বাবা,
ভাই সকলেই খুব খুশি জিমির উপর।
0 Comments